আজ, বৃহস্পতিবার | ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | বিকাল ৪:৪৭

ব্রেকিং নিউজ :
মাগুরা সদর উপজেলায় রানা শ্রীপুরে রাজন নির্বাচিত মাগুরা সদর ও শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মাগুরা সদরে রানা ও শ্রীপুরে রাজনের দিকেই সবার নজর মাগুরায় ঋষিপাড়ার সদস্যদের মধ্যে কৃষিব্যাংকের সহজশর্তে ঋণ বিতরণ মাগুরায় রানাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন ছাড়লেন ভিপি জাহাঙ্গীর শ্রীপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রাজন-সংগ্রামের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ জমে উঠেছে শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন মাগুরায় জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ পড়ে কাঁদলেন শ্রীপুরের মুসল্লিরা মহম্মদপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় শিক্ষকের মৃত্যু

কলসী কাঁখের বঁধূয়ারা কোথায় হারালো

সুলতানা কাকলি : কালের বিবর্তনে সমাজ, সভ্যতা, প্রকৃতি সব বদলে যায়। এই বদল মানুষের চোখের সামনে অবিরাম ঘটতে থাকে কিন্তু বেশির ভাগ মানুষের উদাসীন ভাবে চলাফেরা করার কারণে এই বদল নিয়ে কোন ভাবান্তর হয়না। প্যান্ডামিক সিচুয়েশনে মনটা সব সময় আতঙ্কিত থাকে। পরিচিত জনেরা অকালেই চলে যাচ্ছে। বেদনায় নীরবে ঘরে বসে চোখের জলে ভাসি। কত রকম চিন্তা উদয় হয়, হয়তো সেসব চিন্তা সমাজের কাছে মূল্যহীন! তবুও অফুরন্ত অবসরে ভাবনাগুলো বড্ড জ্বালাতন করে।

বেশির ভাগ সময় পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে। এই ছোট্ট নিরিবিলি শহরে আমরা ক’জন দল বেধে ঘুরে বেড়াতাম। পুকুর পাড়ে চড়ুই ভাতি, স্কুল হতে সবাই মিলে দোয়ার পাড়ে বনভোজনের স্মৃতি গুলো বড়ই জ্বালাতন করে।

এইতো সেদিনের কথা!
মাগুরা শহরে মোট কতটা পুকুর ছিলো তা দেখার সৌভাগ্য না হলেও কেশব মোড় হতে পূব, পশ্চিম, উত্তর দক্ষিণের এক বর্গাকৃতি এলাকার ভিতরে সর্ব মোট কয়টি পুকুর ছিলো তা মনের মনি কোঠায় এখনও জ্বলজ্বলে স্মৃতি হয়ে আছে। একটি দোয়া সহ মোট সতেরোটি পুকুর অবস্থিত ছিলো। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এটা কি বিশ্বাস যোগ্য? তৎকালীন আমলে এই পুকুর গুলো বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিলো।

স্মৃতিতে যত দূর মনে পড়ে কেশব মোড়ে নুরো মুন্সীর পুকুর, সর্দার পাড়ার পুকুর, ডিসি সাহেবের পুকুর, হাই স্কুলের পুকুর-ওই পথ দিয়ে নতুন বাজারে যাওয়ার পথে বা পাশে পুরোনো হাসপাতালের সামনে একটি এবং ডান পাশে আরেকটি পুকুর। দশ গজ সামনে আগাতেই রাস্তার ডানে ও বামে তিনটে পুকুর বিদ্যমান ছিলো। একটা ভুমি অফিসের অপরটি আনোয়ার উকিলের পুকুর ও তার অপোজিটে তপনদের পুকুর ছিলো। এগুলো ছাড়াও, নূতন বাজার যেতে বা পাশে সাহাবাড়ীর পুকুর, হাটের সাথে লাগোয়া পুকুর, অমূল্য সাহার পুকুর, উত্তরে কলেজের পুকুর ও নিরো স্যার দের পুকুর ,গার্লস স্কুলের ভিতর একটি পুকুর ও মাজেদুল হক সাহেবের বাড়ীর সামনে একটি পুকুর, বেনুমিয়ার বাড়ীতে একটি ও উনার পাশের বাড়ী বাচ্চু ভাইদের পুকুর সহ দোয়ার পাড়ে একটি দোয়া অবস্থিত ছিলো।

শহরের আংশিক এই এলাকাতে যদি দোয়া সহ এতগুলি পুকুর থাকে তাহলে অন্য এলাকাতে কি পরিমাণ পুকুর ছিলো? তখন নাগরিক সভ্যতায় পুকুরগুলো সব কটি ব্যবহৃত হতো। সব শ্রেণী ও বয়সের মানুষের আনাগোনায় পুকুরের ঘাট গুলি মুখরিত ছিল। এখন সভ্যতা বৃদ্ধির কারণে সব ভরাট করে দালান কোঠা উঠেছে, কোনোটা সংস্কারহীন হয়ে মৃতপায় অবস্থা। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে কলেজের পুকুরে হতো সাঁতার প্রতিযোগিতা। দলে দলে বিভিন্ন বয়সী সাঁতারুদের পদধ্বনিতে পুকুরটি মুখরিত হতো। এখন বোধহয় সাঁতার প্রতিযোগিতা নামক খেলাটি আমাদের মাগুরার সমাজ হতে উঠেই গেছে।কই একজন সাঁতারুর নামওতো বর্তমানে কানে আসে না। পুকুর হারিয়ে গেছে, সেই সাথে সাতারুরাও হারিয়ে গেলো!

এ প্রসঙ্গে আরও বলা যায় যে, বর্তমানে আধুনিক সভ্যতার কারণে মাগুরাবাসীর মন হতে, “কলসী কাঁখে কোন রুপসী ঘাটে যায়…. তারে চিনি ও জানি সে কয়না কথা… গানটা সমাজ বিবর্তনে অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে, আর সব ঘাট গুলোও বিলিন হয়ে গেছে। যান্ত্রিক সভ্যতার কল্যানে বধূয়াগণের এখন আর কলসী কাঁখে নিয়ে ঘাটে যেতে হয়না। ঘরে বসেই ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে জল পাওয়া যায়। তাই এখন বধূয়ারা আছে কিন্তু কলসী কাঁখের বধুয়ারা আমাদের মাগুরার শহুরে সমাজ হতে বিলিন হয়ে গেছে।

এই প্যানডামিক সিচুয়েশনে যেনো শক্ত নাইলনের দড়ি দিয়ে হাত, পা সব বাধা! না হলে আমাদের “মাস্তি” গ্রুপের সদস্যরা গ্রামের বাড়ীতে যেয়ে ঠিকই কলসী কাঁখে কলস ভর্তি জল নিয়ে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে ঘরে ফিরতাম এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তা অবশ্যই ক্যামেরা বন্দী করে রাখতাম।

চোখের সামনে ছায়াছবির মতন শৈশবের পুরোনো দিনগুলোর কথা মনের পর্দায় ভেসে উঠছে। আমাদের শৈশবটা অনেক সমৃদ্ধ ও বর্ণিল ছিল। প্রাণের স্পন্দনে আমরা মাতোয়ারা হয়েছি। সতেজ নিঃশ্বাস নিয়ে বড় হয়েছি। পুকুরে সাঁতার কেটেছি, সাঁতারু হয়েছি।

এখন পুকুর নেই, নদী মরে গেছে, মানুষ আছে,সাঁতারু নেই, বধূয়ারা আছে কিন্তু কলসী কাঁখের বধূয়ারা নেই। কালের বিবর্তনে সব হারিয়ে গেছে।
সুলতানা কাকলি:  লেখিকা এবং সাবেক গার্লস গাইড

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology